821- قلت يا أبا هريرة، إني أكون أحيانا وراء الإمام قال: فغمز ذراعي، وقال: اقرأ بها يا فارسي في نفسك فإني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: " قال الله تعالى: قسمت الصلاة بيني وبين عبدي نصفين: فنصفها لي، ونصفها لعبدي، ولعبدي ما سأل " قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " اقرءوا يقول العبد {الحمد لله رب العالمين} [الفاتحة: 2] يقول الله عز وجل: حمدني عبدي، يقول: {الرحمن الرحيم} [الفاتحة: 1]، يقول الله عز وجل: أثنىعلي عبدي، يقول العبد {مالك يوم الدين}، يقول الله عز وجل: مجدني عبدي، يقول العبد {إياك نعبد وإياك نستعين} [الفاتحة: 5]، يقول الله: هذه بيني وبين عبدي ولعبدي ما سأل، يقول العبد {اهدنا الصراط المستقيم، صراط الذين أنعمت عليهم غير المغضوب عليهم، ولا الضالين} [الفاتحة: 7]، يقول الله: فهؤلاء لعبدي ولعبدي ما سأل "
Abu Hurairah reported the Messenger of Allah (May peace be upon him) as saying:If anyone observes a prayer in which he does not recite Umm al-Qur’an, it is incomplete, it is incomplete, it is incomplete, and deficient. (The narrator said) I said: Abu Hurairah, sometime I pray behind the imam(then what should I do)? Pressing my hand he replied: O Persian, recite it inwardly, for I heard the Messenger of Allah (ﷺ) as saying that Allah, Most High, has said: I have Me and the Half for my servant and My servant will receive what he asks. The Messenger of Allah(ﷺ) said: Recite. When the servant says: “praise be to Allah, the Lord of the Universe,” Allah, Most High says: “My servant has praised me.” When the servant says: “ The Compassionate, the merciful, “Allah Most High says: “My servant has lauded me.” When the servant says: “Owner of the Day of Judgment,” Allah, Most High, says: “My servant has glorified Me” When the servant says: “ Thee do we worship and of thee we ask help. “ (Allah says) “This is between Me and My servant, and My servant will receive what he asks.” When the servant says: “ Guide us to the Straight Path, the path of those whom thou hast favoured, not ( the path) of those who earn thine anger nor of those who go astray,”(Allah says: ) “This is for My servant, and My servant will receive what he asks.”
Al-Albani said: Hadith Sahih
ابوہریرہ رضی اللہ عنہ کہتے ہیں کہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا: جس نے نماز پڑھی اور اس میں سورۃ فاتحہ نہیں پڑھی تو وہ ناقص ہے، ناقص ہے، ناقص ہے، پوری نہیں ۔ راوی ابوسائب کہتے ہیں: اس پر میں نے کہا: ابوہریرہ! کبھی کبھی میں امام کے پیچھے ہوتا ہوں ( تو کیا کروں! ) تو انہوں نے میرا بازو دبایا اور کہا: اے فارسی! اسے اپنے جی میں پڑھ لیا کرو، کیونکہ میں نے رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کو فرماتے ہوئے سنا ہے: اللہ تعالیٰ فرماتا ہے: میں نے نماز ۱؎ کو اپنے اور اپنے بندے کے درمیان نصف نصف تقسیم کر دی ہے، اس کا نصف میرے لیے ہے اور نصف میرے بندے کے لیے اور میرے بندے کے لیے وہ بھی ہے جو وہ مانگے ۔ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا: پڑھو: بندہ «الحمد لله رب العالمين» کہتا ہے تو اللہ عزوجل کہتا ہے: میرے بندے نے میری تعریف کی، بندہ«الرحمن الرحيم» کہتا ہے تو اللہ عزوجل فرماتا ہے: میرے بندے نے میری توصیف کی، بندہ «مالك يوم الدين» کہتا ہے تو اللہ عزوجل فرماتا ہے: میرے بندے نے میری عظمت اور بزرگی بیان کی، بندہ «إياك نعبد وإياك نستعين» کہتا ہے تو اللہ فرماتا ہے: یہ میرے اور میرے بندے کے درمیان ہے اور میرے بندے کے لیے وہ ہے جو وہ مانگے، پھر بندہ «اهدنا الصراط المستقيم * صراط الذين أنعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين» کہتا ہے تو اللہ فرماتا ہے: یہ سب میرے بندے کے لیے ہیں اور میرے بندے کے لیے وہ ہے جو وہ مانگے ۲؎ ۔
Ebu Hureyre (r.a.)'den rivayet edildiğine göre, Nebi (Sallallahu aleyhi ve Sellem), "Her kim namaz kılar da onda Fatiha okumazsa, o namaz eksiktir, o namaz eksiktir, o namaz eksiktir, tamam değildir'* buyurmuştur. (Ravi Ebu’s-Saib) dedi ki: Ben de: Ey Eba Hureyre bazan imamın arkasında bulunuyorum (o zaman da okuyacak mıyım)? dedim. Kolumu sıkıştırdı ve dedi ki: Ey Farisî (o zaman) onu içinden oku. Çünkü ben Hz. Peygamber (Sallallahu aleyhi ve Sellem)'i şöyle buyururken işittim: "Aziz ve celil olan Allah buyurdu ki; Ben namaz'ı (yani Fatiha'yı) kendimle kulum arasında ikiye böldüm. Yarısı benim yarısı da kulumundur. Kulum'a istediği verilecektir." Nebi (Sallallahu aleyhi ve Sellem) devamla dedi ki: Kul [ El hamdu lillahi Rabbil alemin ] dediği zaman Allah Teala; Kulum bana hamd etti, der. [ Errahmanirrahim ] dediğinde, Allah Teala; Kulum bana sena etti, der. [ Malikiyevmiddin ] dediğinde; Kulum beni temcîd eyledi, der. Bir defasında; Kulum (umurunu) bana tefviz eyledi, der buyurdu. Kul: [ İyyake na'budu ve iyyake nestain ] dediği zaman Allah; Bu kulumla benim aramdadır; hem kulumun dilediği onundur. der. — Kul [ İhdine's-sirate'l mustakim siratellezine en amte aleyhim ğayri'l mağdubi aleyhim vele'd-daaaalliin ] dediği zaman Allah: — İşte bu kulumundur. Hem kulumun dilediği onundur buyurur.» derken işittim. Diğer tahric: Müslim, salat; Tirmizî, salat; Tefsir süre, Nesaî, iftitah; İbn Mace, ikame, edeb; Muvatta, nida; Ahmed b. Hanbel, II, 241, 285, 480, 204, 215, 250, 290, 457, 460, 478, 487, IH
। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, যার মধ্যে ‘কুরআনের মা’ অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহা পাঠ করল না, তার ঐ সালাত ত্রুটিপূর্ণ, তার সালাত ত্রুটিপূর্ণ, তার সালাত ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি যখন ইমামের পিছনে থাকি, তখন কিভাবে পড়ব? তিনি আমার বাহু চাপ দিয়ে বললেন, হে ফারসী! তুমি মনে মনে পাঠ করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি সালাতকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) আমার ও আমার বান্দাহ‘র মধ্যে দু‘ ভাগ করে নিয়েছি। যার এক ভাগ আমার জন্য, আরেক ভাগ আমার বান্দাহ‘র জন্য এবং আমার বান্দাহ আমার কাছে যা চায়, তাকে তাই দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করো। বান্দাহ যখন বলে, ‘‘আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন’’- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার প্রশংসা করেছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, ‘‘আর-রহমানির রহীম’’- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার গুণগান করেছে। বান্দাহ যখন বলে, ‘‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’’- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমাকে সম্মান প্রদর্শন করেছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, ‘‘ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন’’- তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সীমিত এবং আমার বান্দাহ যা প্রার্থনা করেছে- তাই তাকে দেয়া হবে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, ‘‘ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকীম, সীরাতালাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাযযল্লীন’’- তখন আল্লাহ বলেন, এর সবই আমার বান্দাহ‘র জন্য আমার বান্দাহ আমার কাছে যা চেয়েছে, তাকে তাই দেয়া হবে। সহীহ : মুসলিম।[1] [1] মুসলিম (অধ্যায়ঃ সালাত, অনুঃ ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব), তিরমিযী (অধ্যায়ঃ সূরাহ ফাতিহার তাফসীর, হাঃ ২৯৫৩), নাসায়ী (অধ্যায়ঃ ইফতিতাহ, হাঃ ৯০৮) ইবনু মাজাহ সংক্ষেপে (অধ্যায়ঃ সালাত ক্বায়িম, অনুঃ ইমামের পেছনে ক্বিরাআত পাঠ, হাঃ ৮৩৮) সকলে ‘আলা সূত্রে। খিদাজ শব্দের অর্থঃ ১। ইমাম খাত্তাবী বলেনঃ খিদাজ মানে হচ্ছে নাক্বিস, ফাসিদ ও বাতিল। আরবরা এই খিদাজ শব্দ ঐ সময় ব্যবহার করেন যখন উটনী তার পেটের বাচ্চা ঐ অবস্থায় ফেলে দেয় যখন তা রক্তের পিন্ড থাকে মাত্র, পূর্ণ বাচ্চা জন্ম হয় না। এখান থেকেই খিদাজ শব্দ নেয়া হয়েছে। (দেখুন, মা‘আলিমুস সুনান, ১/৩৮৮) ২। ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ খিদাজ অর্থ হচ্ছে এমন ক্ষতি, যে ক্ষতির কারণে সালাত নাজায়িয হয়ে যায়। (দেখুন, কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ২০)। ৩। শায়খ ‘আব্দুল ক্বাদির জিলানী বলেনঃ সালাতে সূরাহ ফাতিহা পড়া ফারয ও রুকন। সূরাহ ফাতিহা না পড়লে সালাত বাতিল হয়ে যায়। (দেখুন, গুনিয়াতুত ত্বালিবীন, পৃঃ ৫৩)। ৪। ইবনু ‘আব্দুল বার বলেনঃ খিদাজ হচ্ছে নুক্বসান, ফাসাদ। সেজন্যই আরবের লোকেরা ‘উটনীর খিদাজ বাচ্চা’ কথাটা তখন বলে থাকেন যখন উটনী বাচ্চা পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই গর্ভপাত করেন (অর্থাৎ অকালে ঝরে যাওয়া বাচ্চাকে যেমন বাচ্চা বলা যায় না তেমন সূরাহ ফাতিহা না পড়লে সে সালাতকেও সালাত বলা যায় না)। (দেখুন, ইসতিজকার)। ৫। ইমাম ইবনু খুযাইমাহ বলেন ‘খিদাজ’ বা ত্রুটিপূর্ণ এর ব্যাখ্যায় স্বীয় সহীহ গ্রন্থে সালাত অধ্যায়ে ৯৫ নং অনুচ্ছেদ রচনা করেন এভাবেঃ ‘ঐ খিদাজ এর আলোচনা যে সম্পর্কে অত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুঁশিয়ার করেছেন যে, ঐ ত্রুটি থাকলে সালাত যথেষ্ট হবে না। কেননা ত্রুটি দু’ প্রকারের। এক- যা থাকলে সালাত যথেষ্ট হয় না। দুই- যা থাকলেও সালাত সিদ্ধ হয়। পুনরায় পড়তে হয় না। এই ত্রুটি হলে সিজদা্ সাহু দিতে হয় না। অথচ সালাত সিদ্ধ হয়ে যায়।’ অতঃপর তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস উদ্ধৃত করেনঃ ‘‘ঐ সালাত যথেষ্ট নয়, যার মধ্যে মুসল্লী সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না।’’ (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ)। ৬। ইমাম বুখারী লিখেছেনঃ আবূ ‘উবাইদ (রহঃ), যিনি লুগাত শাস্ত্রে ইমাম এবং আরবদের পরিভাষায় পারদর্শী, তিনি বলেছেনঃ যখন উটনী অসম্পূর্ণ মৃত বাচ্চা ফেলে দেয় যা মানুষের কোনো উপকারে আসে না, তখন আরাবগণ ‘খিদাজ’ শব্দ ব্যবহার করে থাকেন- (কিতাবুল ক্বিরাআত)। আল্লামা ইবনু মুরতাজা যুবাইদী হানাফীও ‘ক্বামুসের শারাহত অনুরূপ লিখেছেন। আল্লামা ইবনু মানজুর ‘লিসানুল আরব’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ ‘প্রত্যেক খুর বিশিষ্ট প্রাণী যখন তার গর্ভশয় পূরণ হওয়ার পূর্বেই প্রসব করে দেয় তখন তাকে খিদাজ বলে।’ ৭। আল্লামা জাহরুল্লাহ যামাখশারী বলেনঃ যদি কোনো অঙ্গ যেমন হাত ইত্যাদি কাটা পড়ে তাকে ও খিদাজ বলা হয়। অনুরূপভাবে যে সালাতে কোনো অঙ্গ বা অংশ অসম্পূর্ণ আছে তাকে খিদাজ বলা হয়। ৮। আল্লামা যুরকানী বলেনঃ আবূ হুরাইরাহর খিদাজ শব্দ বিশিষ্ট এই হাদীসটি সালাতে সূরাহ ফাতিহা ওয়াজিব হওয়ার জন্য মজবুত দলীল। (মুয়াত্তার শারাহ ১/১৫৯)। ৯। আল্লামা ‘আবদুর রউফ মুনাদী স্বীয় গ্রন্থে জামিউস সাগীরে লিখেছেনঃ ‘খিদাজ অর্থ নুক্বসান বিশিষ্ট।’ অনুরূপভাবে আল্লামা ‘আযীযীও জামিউস সাগীরের শারাহ গ্রন্থে লিখেছেনঃ খিদাজ বলতে যাতি নুক্বসানকে বুঝানো হয়েছে, যাতে সালাত একেবারেই খারাপ ও পন্ড হয়ে যায়। ১০। হাফিয সাইয়্যিদ আহমাদ হাসান দেহলভী লিখেছেনঃ উপরোক্ত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিহা বিহীন সালাতকে খিদাজ বলেছেন। খিদাজ বলা হয় নুক্বসানকে। নুক্বসানের দু’টি প্রকার আছে। ১. নুক্বসানে যাতি, ২. নুক্বসানে সিফাতি। নুক্বসানে যাতি হচ্ছে, যা কোনো রুকুন বা অংশের অনুপস্থিতিতে বা অভাবে হয়ে থাকে। আর নুক্বসানে সিফাতি হচ্ছে, যা কোনো বস্তুর বিশ্লেষনের বা গুনোর অভাবে হয় আর এখানে নুক্বসানে যাতিই বুঝানো হয়েছে, সিফাতি নয়। সূরাহ ফাতিহা পাঠ সালাতের অন্যতম রুকন। তাই কতিপয় লোক কর্তৃক একে নুক্বসানে সিফাত ধরে নেয়া একবারেই ভুল এবং পূর্ববর্তী ‘আলিমগণের সরাসরি বিরোধী। (আহসানুত তাফসীর)। ১১। তাফসীরে ফাতহুল বায়ানে রয়েছেঃ ‘নিশ্চয় নাক্বিস সালাত এমন ক্ষদি, যে ক্ষতি সালাতে করলে প্রকৃতপক্ষে সেই সালাতকে সালাতই বলা যায় না।’ খিদাজ শব্দের অর্থ যে নাক্বিস, ফাসিদ ও বাতিল। এর আরো প্রমাণ দেখুন তাফসীরে কুরতুবী ১/১২৩, শারাহ যুরক্বানী ১/১৭৫, তানভিরুল হাওয়ালিক, ১/১০৬, নায়লুল আওত্বার, ২/২১৪, লিসানুল আরব, ২/৭২-৭৩ এবং অন্যান্য)। কতিপয় লোক বলে থাকেনঃ ‘খিদাজ অর্থ অপূর্ণ। অর্থাৎ সালাত হবে কিন্তু কিছুটা ত্রুটি থাকবে।’ কিন্তু এটা কি আদৌ ঠিক হবে? সূরাহ ফাতিহাটা পড়ে নিয়ে ঐ ত্রুটিটা সেরে নিলে অসুবিধা কোথায়? লোকেরা ত্রুটিপূর্ণভাবে সালাত আদায় করবে, আর সেই সালাত ক্ববূল হবে কি না সেই সন্দেহও থাকবে, এরূপ সালাত আদায়ে সার্থকতা আছে কি? সুতরাং খিদাজের এরূপ অর্থ করলেও ফাতিহা বিহীন সালাতের কোনো মুল্য থাকছে না। তবে খিদাজের সঠিক অর্থ সেটাই যা মুহাদ্দিসীনে কিরাম, মুফাসসির ও অভিধানবিদগণ করেছেন। অর্থাৎ নুক্বসান, ফাসিদ ও বাতিল। মনে মনে পাঠ করাঃ কতিপয় লোক বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে অন্তরে অন্তরে চিন্তা করা, জিহ্বা দ্বারা পাঠ করা নয়। কিন্তু এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। বরং আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বুঝিয়েছেন জিহ্বা দ্বারা আস্তে আস্তে নিঃশব্দে পড়া। আর এটাই সঠিক মনে মনে চিন্তা করার সাথে জিহ্বার কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু মনে মনে বা চুপি চুপি পাঠ করার সাথে জিহ্বার সম্পর্ক আছে। হিদায়া (১/৯৮) গ্রন্থে রয়েছেঃ ‘ক্বিরাআত হচ্ছে জিহ্বার কাজ।’ আর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) কিন্তু এখানে মনে মনে ক্বিরাআত তথা পড়তে বলেছেন, চিন্তা বা ধেয়ান করতে বলেননি। সেজন্যই এর অর্থ করতে গিয়েঃ ১। ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ এর অর্থ হচ্ছে জিহ্বা দ্বারা আস্তে আস্তে পড়া, উচ্চস্বরে না পড়া। (দেখুন, কিতাবুল ক্বিরাআত পৃঃ ১৭)। ২। ইমাম নাববী বলেনঃ اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ এর অর্থ হচ্ছে তুমি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা নিঃশব্দে জিহ্বা দ্বারা পাঠ করো, এমনভাবে পাঠ করো যেন তুমি নিজের নিজে শুনতে পাও। (দেখুন, সহীহ মুসলিম শারাহ নাববী, ১/১৭০)। ৩। আল্লামা যুরক্বানী বলেনঃ اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ এর অর্থ হচ্ছে শব্দের সঙ্গে জিহ্বা হরকত করা। যদিও নিজ কান পর্যন্ত শব্দটা না আসে। (দেখুন, যুরক্বানী ১/১৭৬) ৪। আল্লামা শাওকানী বলেনঃ اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ এর অর্থ হচ্ছে সূরাহ ফাতিহা চুপি চুপি পাঠ করো, যেন তুমি তোমার অন্তরকে শুনাতে পারো। (দেখুন, নায়লুল আওত্বার ২/২০৭) ৫। মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে চুপি চুপি পাঠ করা, উচ্চস্বরে নয়। (দেখুন, মিরকাত ১/৫২০)। ৬। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী হানাফী বলেনঃ যেসব মুদাররিস اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ ‘‘তুমি মনে মনে পাঠ করো’’ এর থেকে চিন্তা ও মনোযোগ অর্থ নিয়েছেন, তাদের ঐ অর্থ নেয়া আভির্ধানিক মতে ঠিক হয়নি। কারণ মনে মনে ক্বিরাআত করার অর্থ কোথাও চিন্তা বা মনোযোগ করা প্রমাণিত হয়নি। (দেখুন, আরফুশ শাজী, পৃঃ ১৭। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-এর উক্তি কি তাঁরই বর্ণিত অপর হাদীসের বিপরীতঃ কতিপয় লোক এ ধরনের অহেতুক উক্তি করে থাকেন এবং এর প্রমাণ হিসেবে বলেনঃ মুসলিম ও নাসায়ীতে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘ইমামের ক্বিরাআতকালে তোমরা চুপ থাকবে।’’ এর জবাব কয়েকভাবে দেয়া হলোঃ প্রথমতঃ নাসায়ীর হাদীসটি সহীহ নয়। হাদীসটির সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ‘আজলান এবং আবূ খালিদ আহমার দু’জনেই দুর্বল বর্ণনাকারী (তাক্বরীবুত তাহযীব)। ইমাম আবূ দাঊদও হাদীসটি ঐ সূত্রে বর্ণনা করার পরে বলেছেনঃ আমাদের নিকট হাদীসটি সুরক্ষিত নয়। এটি বর্ণনাকারীর আবূ খালিদের একটি সন্দেহযুক্ত বা ভ্রান্ত কথা। ২। হাদীসটি মুসলিমে বর্ণিত হয়নি। তবে হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম মুসলিমের সঙ্গে তার লিখকের কথাবার্তা হয়েছিল। তা হচ্ছে এইঃ লিখক বললেন, ইমাম যখন ক্বিরাআত করবে তখন মুক্তাদীরা পড়বে না- কথাটি কি সহীহ? ইমাম মুসলিম বললেন, আমার নিকট সহীহ অর্থাৎ সবার নিকট নয়। এক পর্যায়ে লিখক বললেন, আপনার নিকট সহীহ হলে হাদীসটি আপনি আপনার কিতাব সহীহ মুসলিমে আনছেন না কেন? তখন ইমাম মুসলিম বললেন, হাদীসটি সহীহ ওহয়ার ব্যাপারে সকলে যেহেতু একমত নন, তখন আমি আমার কিতাবে তা উঠাতে চাই না। কারণ আমার কিতাবে ঐ সব হাদীস স্থান দিয়েছি, যেগুলো সহহি হওয়ার ব্যাপারে সকলে একমত। (দেখুন, মুসলিম ১/১৭৪) ৩। হাদীসটি ক্বিরাআতের কথা ‘আম’ ভাবে এসেছে। কিন্তু মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পাঠের কথা ‘খাস’ ভাবে বিভিন্ন সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এ হাদীস সূরাহ ফাতিহা ব্যতীত অন্য সূরাহ ক্বিরাআতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ৪। বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআতে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না তার সালাত হয় না।’’ বর্ণনাটির বর্ধিত অংশও সহীহ। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তে বলেছেন, আর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) কিভাবে পড়তে হবে তার ধরণটা শুধু উল্লেখ করেছেনঃ চুপি চুপি পড়বে, উচ্চস্বরে নয়। সুতরাং আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) মোটেই হাদীসের পরিপন্থি কাজ করেননি। না তার নিজ বর্ণিত হাদীসের, আর না অন্যান্য সাহাবায়ি কিরাম বর্ণিত হাদীস ও আসারসমূহের। যা অতি স্পষ্ট ব্যাপার। ইমাম বুখারী বলেনঃ মুক্তাদী যখন ইমামের সাকতার (নীরবতার) সময় পাঠ করবে তখন ‘‘ইমামের ক্বিরাআতকালে তোমরা চুপ থাকো’’ কথাটার বিপরীত হয় না। তা এজন্যই যে, মুক্তাদী ইমামের সাকতার সময় পাঠ করছে এবং ইমাম যখন পড়তে তখন মুক্তাদী চুপ থাকছে। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, এবং বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত)। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ (ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠের ব্যাপারে) হাদীস সম্রাটগণ এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন যে, ইমামের পড়াকালে মুক্তাদীরা পড়বে না, কিন্তু ইমাম যখন চুপ থাকবেন (সাকতা করবেন) তখন মুক্তাদীরা পড়ে নিবে। (দেখুন, জামি‘আত-তিরমিযী) ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল’ ‘আস ক্বিরাআত পড়তেন ঐ সময় যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাকতা করতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পড়তেন তিনি তখন নীরব থাকতেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আবার নীরব থাকতেন তখন তিনি আবার পড়তেন। (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৬৮, ইমাম বায়হাক্বী বলেন, ‘আমর ইবনু শু‘আইবের তার পিতা থেকে দাদার সূত্রের এ হাদীসের সকল সাক্ষ্যদাতাগণ বিশস্ত)। ইমাম বায়হাক্বী আরো বলেনঃ সাহাবায়ি কিরামগণ সকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে (সূরাহ ফাতিহা) ক্বিরাআত করতেন তখন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ক্বিরাআত করতেন তখন সাহাবায়ি কিরামগণ চুপ থাকতেন। এরপর আবার যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকতেন, তখন আবার সাহাবায়ি কিরামগণ পড়তেন। (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৬৯)। মাসআলাহঃ সালাতে প্রত্যেক মুসল্লীর সূরাহ ফাতিহা পাঠ প্রসঙ্গ (ক) ইমাম, মুক্তাদী, নির্বিশেষে সকলের জন্যই সূরাহ ফাতিহা পাঠ আবশ্যক হওয়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মারফূ হাদীস- ইমাম, মুক্তাদী, একাকী সালাত আদায়কারী প্রত্যেককেই সকল প্রকার সালাতে প্রত্যেক রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পড়তেই হবে, অন্যথায় সালাত অসম্পূর্ণ, বরবাদ, অগ্রহণযোগ্য ও মুরদা গণ্য হবে, উক্ত সালাত যথেষ্ট ও ক্ববূল হবে না ইত্যাদি- সূরাহ ফাতিহা পাঠের প্রতি এ ধরণের গুরুত্বদান এবং তা না পাঠকারীর প্রতি সতর্কবাণী সম্বলিত মারফূ হাদীসের সংখ্যা অনূন্য অর্বশতাধিক। বহু সংখ্যক সাহাবায়ি করিাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে এসব মারফূ হাদীসাবলী বর্ণনা করেছেন। যাদের মধ্যে ‘উবাদাহ ইবনু সামিত, আবূ হুরাইরাহ, আনাস, ইবনু ‘আব্বাস ‘আয়িশাহ, আবূ সাঈদ আল-খুদরী, ‘আমার ইবনু শু‘আইব, আবূ উমামাহ, ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদাহ, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) প্রমূখ সাহাবীগণও রয়েছেন। লিখনী সংক্ষেপ করাণার্থে নিম্নে সেসব হাদীসাবলী থেকে কয়েকটি হাদীস তুলে ধরা হলো। (১) ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে না তার সালাত হবে না। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য)। আলোচ্য হাদীসটি সম্পর্কে বিখ্যাত হাদীস বিশারদগণের অভিমত নিম্নে পেশ করা হলোঃ (ক) সমস্ত মুহাদ্দিসগণের সর্দার ইমাম বুখারী (রহঃ) উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ)-এর এ হাদীসটি সম্পর্কে বলেন, সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর ক্বিরাআত (সূরাহ ফাতিহা) পড়া ওয়াজিব। মুকীম অবস্থায় হোক বা সফরে, সশব্দে ক্বিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দে সকল সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। (দেখুন, সহীহুল বুখারী, ১ম খন্ড ১০/৯৫)। (খ) সহীহুল বুখারীর অন্যতম ব্যাখ্যাকার আল্লামা শিহাবুদ্দীন আহমাদ কাস্তালানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটির উদ্দেশ্য হলো, একাকী সালাত আদায়কারী, ইমাম কিংবা মুক্তাদী নির্বিশেষে সকলের জন্যই সশব্দে ক্বিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দের সকল প্রকার সালাতেই প্রত্যেক রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। (দেখুন, ইরশাদুশ শারী ২/৪৩৯)। (গ) সহীহুল বুখারীর ব্যাক্যাকার বিখ্যাত হানাফী ‘আলিম আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রহঃ) বলেন, উবাদাহ ইবনু সামিতের এ হাদীস দ্বারা আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক, ইমাম আওযাঈ, ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম ইসহাক্ব, ইমাম আবূ সাওর, ইমাম দাঊদ (রহঃ) প্রমূখ ইমামগণ সকলেই ইমামে পিছনে মুক্তাদীর সকল প্রকার সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব হওয়ার দলীল গ্রহণ করেছেন। (অর্থাৎ তারা সকলেই হাদীসের ‘লিমান’ (কোনো ব্যক্তি) শব্দটি ইমাম, মুক্তাদী, একাকী সালাত আদায়কারী নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রযোজ্য বলেছেন)। (দেখুন, ‘উমদাতুল কারী ৩/৬৪)। (ঘ) সহীহুল বুখারীর অন্যতম ব্যাখ্যাকার আল্লামা কিরমানী (রহঃ) বলেন, উবাদাহ ইবনু সামিতের এ হাদীস এ হুকুমেরই দলীল যে, ইমাম, মুক্তাদী, একাকী সালাত আদায়কারী সকলের জন্যই সূরাহ ফাতিহা পড়া ওয়াজিব (অপরিহার্য)। (দেখুন ‘উমদাতুল ক্বারী ৩/৬৩)। (ঙ) বিখ্যাত রিজালবিদ ইবনু ‘আবদুল বার বলেন, মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন, মুক্তাদীদের কেউ যেন ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ছেড়ে না দেয়। যদিও ইমাম সশব্দে ক্বিরাআত পাঠ করেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী ‘লিমান লাম ইয়াকরাউ বিফাতিহাতিল কিতাব’ এতে ‘লিমান’ কথাটি ‘আম। যাকে কোনো কিছুর সাথে খাস (নির্দিষ্ট) করা যাবে না। (দেখুন, তামহীদ ও তালখীসুল হাবীর)। (চ) আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি প্রকাশ্যই প্রমাণ করে, প্রত্যেক রাক‘আতেই সূরাহ ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। চাই ইমাম হোক বা মুক্তাদী, ইমাম সশব্দে ক্বিরাআত পাঠ করুক বা নিঃশব্দে। (ছ) অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনে কিরাম হাদীসের ‘লিমান’ শব্দটি ‘আম অর্থে গ্রহণ করেছেন। ইমাম কাস্তালানী (রহঃ) বলেন, এটাই হচ্ছে জমহুর মুহাদ্দিসীনের মাযহাব (অভিমত)। অর্থাৎ ইমাম, মুক্তাদী, একাকী সালাত আদায়কারী নির্বিশেষে সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। (দেখুন, ইরশাদুশ শারী ২/৪৩৫)। (২) উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না তার সালাতই হলো না। (দেখুন, ইমাম বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৫৬)। এ হাদীসটি সম্পর্কেঃ (ক) স্বয়ং ইমাম বায়হাক্বী বলেন, এ হাদীসের সনদ সহীহ। আর হাদীসের বর্ণিত শব্দ خلف الإمام ‘ইমামের পিছনে’ কথাটি উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে সহীহভাবে বিভিন্নসূত্রে বর্ণিত এবং বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ। (দেখুন, কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৫৬)। (খ) হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ‘আলিম ভারতের ইমাম বুখারী নামে খ্যাত দেওবন্দী হানাফীদের মধ্যে অতুলনীয় মুহাদ্দিস আল্লামা আনোয়ার মাহ্ কাশমিরী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস ইমামের পিছনে সূরাহ্ ফাতিহা পড়ার পক্ষে আংটির চমকদার মতির ন্যায় উজ্জ্বল। (দেখুন, ফাসলুল খিতাব, পৃঃ ১৪৭)। (৩) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি ইমামের ক্বিরাআত অবস্থায় কিছু পড়ে থাকো? এটা করবে না। বরং কেবলমাত্র সূরাহ ফাতিহা চুপে চুপে পড়বে। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, সহীহ ইবনু হিব্বান, ত্বাবারানী আওসাত্ব, বায়হাক্বী; হাদীসটি সহীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ‘ইমামের পিছনে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ নং ২২৯, নায়লুল আওত্বার ২/৬৭, অনুচ্ছেদ- মুক্তাদীর ক্বিরাআত ও চুপ থাকা। হাদীসটি মূলতঃ ‘‘যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা চুপ থাকো এবং মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো’’ সূরাহ আল-আ‘রাফের এ আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরূপ)। (৪) ‘আমর ইবনু শু‘আইব তার পিতা থেকে দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা কি আমার পিছনে কিছু পড়ো? সাহাবীগণ বললেন, আমরা খুব জলদি পড়ে থাকি। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সূরাহ ফাতিহা ছাড়া কিছুই পড়বে না। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, হাদীসটির সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত এবং জমহুর মুহাদ্দিসগণের নিকট এর সনদ সহীহ, ইমাম যায়লায়ী হানাফী (রহঃ) বলেন, ‘জমহুর মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট ‘আমর ইবনু শু‘আইবের তার পিতা থেকে দাদার সূত্রে বর্ণনা দলীল হিসেবে গণ্য, আর আমরাও এটা পছন্দ করি।’ হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইবনু সালাহ সহ অন্যান্য বিদ্বানগণও তার বর্ণনা সহীহ বলেছেন, সুতরাং হাদীসটি সহীহ)। (৫) ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ঐ সালাত আদায় করলেন যে সালাতে স্বরবে ক্বিরাআত পড়তে হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যখন উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পাঠ করবো তখন তোমাদের কেউ উম্মুল কুরআন (সূরাহ ফাতিহা) ছাড়া অন্য কিছু পড়বে না। (হাদীসটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী, আহমাদ, বুখারী, ইমাম দারাকুতনী বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত, ইমাম বুখারী একে সহীহ বলেছেন, ইমাম বায়হাক্বীও এর সকল বর্ণনাকারীদের বিশ্বস্ত বলেছেন, এবং ইবনু হিব্বান, হাকিম ও বায়হাক্বী ইবনু ইসহাক্ব থেকে حدثنا শব্দে, ইবনু ইসহাক্ব বলেন আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন মাকহুল, মাহমূদ ইবনু রাবী‘ থেকে ‘উবাদাহ ইবনু সামিত থেকে, এতে ইবনু ইসহাক্বের শ্রবণ স্পষ্ট হয়েছে, তার অনুসরণ (তাবে)’ করেছেন যায়িদ ইবনু ওয়অক্বিদ ও অন্যান্যরা মাকহুল সূত্রে)। এর সমর্থক (শাহিদ) বর্ণনাবলীর অন্যতম শাহিদ বর্ণনা হচ্ছে যা আহমাদ বর্ণনা করেছেন খালিদ হাজ্জা আবূ ক্বিলাবাহ থেকে মুহাম্মাদ ইবনু আবূ ‘আয়িশাহ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবীর সূত্রে। হাদীসটি নিম্নরূপঃ [২য় অংশ নোটে দেখুন]
وقوله: "قسمت الصلاة بينى وبين عبدي نصفين" قال النووي في شرحه على "صحيح مسلم": قال العلماء: المراد بالصلاة هنا الفاتحة، سميت بذلك، لأنها لا تصح إلا بها، كقوله- صلى الله عليه وسلم -: "الحج عرفة" ففيه دليل على وجوبها بعينها في الصلاة.
قال العلماء: والمراد بقسمتها من جهة المعنى، لأن نصفها الأول تحميد لله تعالى، وتمجيد وثناء عليه، وتفويض إليه، والنصف الثاني سؤال وطلب وتضرع وافتقار.
وقال الخطابي: قد يستدل بهذا الحديث من لا يرى التسمية آية من فاتحة الكتاب، وقالوا: لو كانت آية لذكرت كما ذكر سائر الآي، فلما بدأ بالحمد دل أنه أول آية منها، وأنه لاحظ للتسمية فيها واختلف أهل العلم فيها، فذهب جماعة إلى هذا، يروى ذلك عن عبد الله بن مغفل، وبه قال مالك والأوزاعى وأصحاب الرأي، وعليه قراء المدينة والبصرة.
وذهب جماعة إلى أنها آية من الفاتحة وهو قول ابن عباس وأبي هريرة وابن عمر، وبه قال سعيد بن جبير وعطاء، وإليه ذهب الثوري وابن المبارك
والشافعي وأحمد وإسحاق، وعليه قراء مكة والكوفة وأكثر فقهاه الحجاز.
وانظر لزاما "نصب الراية" 1/ 327 - 328 للإمام جمال الدين عبد الله بن يوسف الزيلعي.